পুলিশ জামাই
:Hosain Ahmed(আমি হিমু)
-(৩য় পর্ব)
-
অনেক ভেবে চিন্তে আমি দোলাকে বেছে নিলাম।যেই মেয়ে আমার সম্পর্কে বেশি কিছু না জেনে,না দেখে ভালোবেসেছে সে নিশ্চয় আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।পাখি অনেক কষ্ট পেয়েছে সেটা লাবনীর কাছ থেকে জানলাম।কষ্ট পেলেও আমার কিছু করার নেই।
দোলার সাথে খুব ভালো চলছিলো রিলেশনটা।আমি ওর পিক দেখিনি দোলাও আমার পিক দেখেনি।আমরা দুজনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ মাস পর সামনা সামনি দেখা করবো।ফেসবুকের পাশাপাশি ফোনেও কথা হতো আমাদের। নতুন প্রেমে পড়া,নতুন মানুষের সাথে কথা সবকিছুই অন্যরকম মনে হতো আমার কাছে।এমন মনে হতো যেনো আমি রুপকথার দেশে চলে এসেছি।দোলা আমার অনেক কেয়ার করতো।আমি মাঝে সিগারেট খেতাম এটা দোলাকে বলেছিলাম।ও বলেছিলো সিগারেট ছেড়ে দিতে তাই আমি ছেড়ে দিয়েছি।
২মাস পূর্ণ হবার আগের দিন।
:-কালতো আমরা দেখা করবো তাইনা?(আমি)
:-হ্যা।তুমি কখন রওনা দিবে?(দোলা)
:-আজ বিকেলে রওনা দিবো।রাতে আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে কাল তোমার সাথে দেখা করবো।
:-কোথায় দেখা করবে?
:-হাতিরঝিল আসতে পারবে তুমি?
:-হুম পারবো।
:-তাহলে ওখানেই দেখা হবে।তুমি সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে যেও।এখন বের হচ্ছি আমি।অনেককিছু গোছাতে হবে।
:-আচ্ছা।
ফেসবুক থেকে বের হয়ে এলাম।কাল আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে।আমি দোলাকে কাল সামনাসামনি দেখবো এটা ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগা মনের ঢেও খেলে গেলো।কেমন হবে দোলা?খুব সুন্দরী নাকি কালো,নাকি মোটা!এসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেলো।বাসায় বলেছি আমার এক ফ্রেন্ডের বোনের বিয়ে।সেখানেই রাত থাকবো।পরেরদিন বাসায় ফিরবো।আব্বু আম্মু না করেনি।কারণ তারা আমাকে বিশ্বাস করে।
বিকেলবেলা রওনা হলাম।অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে মনের মধ্যে।দোলার জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।জানিনা ওর পছন্দ হবে কিনা।
পরেরদিন সকাল ৯টা।
আমি একটু আগেই চলে এসেছি।আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডকেও নিয়ে এসেছি।দোলা এখনো আসেনি।অনেক টেনশন হচ্ছে।দোলা কী আমাকে দেখে পছন্দ করবে, যদি ওর পছন্দ নাহয় তখন কী হবে?ধ্যাত কীসব ভাবছি।দোলা নিশ্চয় আমাকে পছন্দ করবে।কারণ ভালোবাসা হয় মন দেখে চেহারা বা সৌন্দর্য দেখে নয়।
ফোনের শব্দে চমকে ওঠলাম।মানুষ যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে তখন হালকা শব্দেও চমকে ওঠে সে।
দোলা কল দিয়েছে
:-কই তুমি?(দোলা)
:-আমি রেষ্টুরেন্টের পাশের দিকটায় আছি।তুমি কই?(আমি)
:-তুমি ওখানে থাকো আমি আসছি।
:-ওকে।
দোলা আসছে।আমার হার্টবিট বাড়ছে।মনের মধ্যে একপ্রকার ভয়ও কাজ করছে।
:-তুমি হুসাইন?
পিছন থেকে কেউ একজন কথাটা বলে ওঠলো।আমি পিছন ফিরে তাকালাম।আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো শাড়ি পড়া একটা মেয়ে।হালকা গায়ের গড়ন।আহামরি সুন্দরী না হলেও একধরণের মায়া লেগে আছে মেয়েটার চোখে মুখে।
:-কীহলো কথা বলোনা কেনো?(দোলা)
:-আমিই হুসাইন(আমি)
:-এই তুমি এত চিকন কেনো?বাসায় কী তোমার আম্মু খেতে দেয়না।
দোলার কথা শুনে আমি অবাক হলাম।প্রথম দেখাতে কোনো মেয়ে এভাবে কথা বলে আমার জানা ছিলোনা।
:-পরিচয় করিয়ে দিই।এহলো আমার ফ্রেন্ড সুমন।সুমন এ হলো দোলা,যার কথা তোকে বলেছিলাম।(আমি)
:-হাই ভাইয়া কেমন আছেন?(দোলা)
:-হ্যা ভালো।তুমি?(সুমন)
:-ভালো।চলুন কোথাও বসি।
:-চলো।(আমি)
আমরা একটা রেষ্টুরেন্টে এসে বসলাম।দোলা আমার পাশের চেয়ারটাতে বসেছে।আমি বারবার আড়চোখে দোলাকে দেখছি।খুব ভালো লাগছে ওকে দেখে।
:-কী খাবে বলো?(দোলা)
:-তোমার যা খুশি।(আমি)
দোলা ৩টা কফির অর্ডার করলো।আমি ব্যাগে থাকা শাড়ির প্যাকেট বের করে দোলার হাতে দিলাম।
:-কী আছে এর মধ্যে?(দোলা)
:-বাসায় গিয়ে খুলে দেখো।(আমি)
:-আচ্ছা।
সারাদিন দোলার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরলাম।অনেক মজা করলাম সবাই মিলে।বিকেলবেলা দোলা চলে গেলো ওর বাসায় আর আমি চলে এলাম সুমনের বাসায়।সেদিন সন্ধায় রওনা দিলাম বাসার পথে।
বাসায় আসতে আসতে রাত ২টা বেজে গেলো।আমি বাসায় আসা পর্যন্ত দোলা কম করে হলেও ৫০ বার ফোন করেছে।মেয়েটা সত্যিই আমাকে খুব ভালোবাসে।
সামনাসামনি দেখা হবার পর আমাদের মাঝে ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো।
দেখার হবার কয়েকদিন পরের ঘটনা।
আমি ফেসবুকে দোলার সাথে কথা বলছি এমন সময় একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসলো সাথে একটা মেসেজ।আইডির নাম রনি মাহমুদ।মেসেজটা ছিলো এমন
:-ভাইয়া আপনার সাথে কথা আছে।প্লিজ রিকোয়েস্টটা এপছেট করবেন।
যেহেতু ছেলেটা কথা বলতে চাই তাই রিকোয়েস্ট এপছেট করলাম।
:-জ্বি বলুন কী বলবেন।(আমি)
:-জানিনা আপনি কথাগুলো কিভাবে নিবেন তবুও বলছি।আপনি দোলাকে কিভাবে চেনেন?(রনি)
:-কোন দোলা?
:-যার সাথে কয়েকদিন আগে ঢাকাতে দেখা করলেন।
:-আমি দোলার সাথে দেখা করেছি আপনি জানলেন কিভাবে?
:-আমি সবই জানি।
:-আপনি কিভাবে জানেন এতকিছু?
:-সে অনেক লম্বা কাহিনী।
:-বলুন আমি শুনবো।
:-দোলার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়।আমার পছন্দের কেউ ছিলোনা তাই বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করি।কিন্তু বাসর রাতে দোলার কাছ থেকে জানতে পারি বিয়েটা ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।ও আরো পড়াশুনা করতে চাই।আমি দোলাকে বলি "আমি তোমার পড়ালেখা করাবো"ও অনেক খুশি হয়েছিলো।আমি যেখানে চাকরী করতাম সেখান থেকে বাসা অনেকদুরে ছিলো বিধায় বাবা মাকে দেখাশুনার জন্য দোলাকে বাসায় রেখে যায়।আমি আগে থেকেই অফিসের পাশে বাসা নিয়ে থাকতাম।প্রতি সপ্তাহে ২দিন বাসায় এসে থাকতাম।দোলাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিই।দোলা পরিবারের সবার অনেক যত্ন নিতো।মাস চারেক ভালোই চলছিলো সবকিছু হঠাৎ করে দোলা পাল্টে যায়।আমার বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।এক পর্যায়ে ও ওর বাপের বাড়ি চলে যায়।ওর পরিবারের লোকজনকে বলে আমি নাকি ওর উপর অনেক নির্যাতন করি।ওর পরিবারের লোকেরা ডিভোর্স পেপার দিয়ে দেয়।কিন্তু আমি এখনো সই করিনি তাই এখনো ডিভোর্স হয়নি আমাদের। আমি দোলার সব খোজখবর রাখি।আমার বিশ্বাস ছিলো দোলা ফিরে আসবে।আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি ওকে।কিন্তু কয়েকদিন আগে আমার এক ফ্রেন্ডের থেকে জানতে পারি ও আপনার সাথে রিকেশন করেছে।
এতটুকু বলেই থামলো লোকটি।
:-কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন?
:-হ্যা পারবো।আমি আমাদের কাবিনের পিক তুলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে ভেসে ওঠলো গোটা দশেক পিক।রনির সাথে বিয়ের সময় তোলা পিক।কাবিনের পিক।সবকিছু আমি দেখলাম।সবকিছু দেখার পরেও কেনো জানি আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি আমি।
:-ভাইয়া দেখেছেন?
আমি কী উওর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা।দোলা এমন একটা কাজ আমার সাথে করবে বিশ্বাসই হচ্ছেনা।এসব ভাবতে ভাবতে দোলার নম্বর থেকে ফোন আসলো।
:-হ্যালো বাবু কী করো?(দোলা)
:-এইতো বসে আছি।তুমি?(আমি)
:-আমিও।খেয়েছো এখন?
:-রনিকে চেনো তুমি?
:-কোন রনি?
:-আগে যার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছিলো।
:-আমি কোনো রনি টনিকে চিনিনা।আর আমার বিয়েও হয়নি।
:-আল্লাহর নাম নিয়ে বলো তুমি রনিকে চেনোনা?
দোলা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলো।আমি চুপ থাকতে দেখে বললাম
:-রনি তোমাকে খুব ভালোবাসে।ওর কাছে ফিরে যাও।
:-সম্ভব না।ওই লোকটাকে আমি সহ্য করতে পারিনা।তাছাড়া এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
:-তোমাদের ডিভোর্স হয়নি এখনো। আমার সাথে তোমার রিলেশন থাকাটা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।এটাকে পরকিয়া প্রেম বলে।আমি পারবোনা এসব আর করতে।
:-প্লিজ এমনটা বলোনা।আমি তোমাকে ছাড়া মরে যাবো।
:-আর তোমাকে ছাড়া রনি মরে যাবে।
আমি অনেক বুঝালাম দোলাকে।রনির কাছে ফিরে যাবার জব্য বললাম।জানিনা ও কতটুকু বুঝলো তবে বললো ভেবে দেখবে।আমি চাইনা আমার জন্য কারো ঘর ভাঙ্গুক।অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি কিন্তু দোলাকে যে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে রনি।
সেদিন আর কথা হয়নি দোলার সাথে।আমিও ফোন দিইনি।অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি।এই রিলেশন যদি আমি চালিয়ে যেতাম তাহলে আমি পরোকাল হারাতাম।অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও মেনে নিয়েছি সবকিছু।দোলাকে আমি আমার নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।আমি চাইলে পারতাম দোলাকে নিজের রাখতে কিন্তু রাখিনি।কারণ পরোকিয়া প্রেমের শাস্তি খুব বেশি হবে পরোকালে।দোলার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছে।ফোনের শব্দে বাস্তবে ফিরলাম।দোলা ফোন দিয়েছে।রিচিভ করার ইচ্ছা না থাকলেও রিচিভ করলাম
:-ভাইয়া কেমন আছেন?আমি রনি(রনি)
:-ভালো।আপনি?(আমি)
:-ভালো।ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে।
:-বুঝলাম না।
:-দোলা ফিরে এসেছে।
:-ভালো।
:-নিন দোলার সাথে কথা বলুন।
:-হ্যালো(দোলা)
:-বলো।(আমি)
:-আমাকে ক্ষমা করে দিও।আর নিজের ক্ষতি করোনা।সবকিছু ঠিকঠাক মত করো।
:-হুম করবো।
:-সত্যিতো?
:-তোমাদের বাসায় একদিন দাওয়াত করবেনা আমাকে?
:-হ্যা করবোতো।তোমার যেদিন ইচ্ছা চলে আসো।
:-আচ্ছা একদিন সময় করে আসবো।এখন আমার কাজ আছে রাখছি।
ওপাশ থেকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।দোলার সাথে কথা বলতে গিয়ে গলাটা শুকিয়ে আসছিলো।কষ্টগুলো বেড়ে যাচ্ছে।ফোন থেকে সিমটা বের করে ভেঙ্গে ফেললাম।ফেসবুক আইডিটা নষ্ট করে দিলাম।দোলার সব পিকও ডিলেট করে দিলাম।সবকিছু ডিলেট করলেও মন থেকে কিভাবে ডিলেট করবো।মনের মধ্যে যে ছবি এঁকেছি সেটা কিভাবে ডিলেট করবো।বুক ফেটে কান্না আসছে আজ।ভালোবাসায় এতটা কষ্ট জানা ছিলোনা।দোলার স্মৃতিগুলো সারাজীবন আমাকে কাঁদাবে সেটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি।
-
-চলবে
-পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।পরের পর্বই সমাপ্তি পর্ব হবে।web service design in bangladeshbd
:Hosain Ahmed(আমি হিমু)
-(৩য় পর্ব)
-
অনেক ভেবে চিন্তে আমি দোলাকে বেছে নিলাম।যেই মেয়ে আমার সম্পর্কে বেশি কিছু না জেনে,না দেখে ভালোবেসেছে সে নিশ্চয় আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।পাখি অনেক কষ্ট পেয়েছে সেটা লাবনীর কাছ থেকে জানলাম।কষ্ট পেলেও আমার কিছু করার নেই।
দোলার সাথে খুব ভালো চলছিলো রিলেশনটা।আমি ওর পিক দেখিনি দোলাও আমার পিক দেখেনি।আমরা দুজনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ মাস পর সামনা সামনি দেখা করবো।ফেসবুকের পাশাপাশি ফোনেও কথা হতো আমাদের। নতুন প্রেমে পড়া,নতুন মানুষের সাথে কথা সবকিছুই অন্যরকম মনে হতো আমার কাছে।এমন মনে হতো যেনো আমি রুপকথার দেশে চলে এসেছি।দোলা আমার অনেক কেয়ার করতো।আমি মাঝে সিগারেট খেতাম এটা দোলাকে বলেছিলাম।ও বলেছিলো সিগারেট ছেড়ে দিতে তাই আমি ছেড়ে দিয়েছি।
২মাস পূর্ণ হবার আগের দিন।
:-কালতো আমরা দেখা করবো তাইনা?(আমি)
:-হ্যা।তুমি কখন রওনা দিবে?(দোলা)
:-আজ বিকেলে রওনা দিবো।রাতে আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে কাল তোমার সাথে দেখা করবো।
:-কোথায় দেখা করবে?
:-হাতিরঝিল আসতে পারবে তুমি?
:-হুম পারবো।
:-তাহলে ওখানেই দেখা হবে।তুমি সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে যেও।এখন বের হচ্ছি আমি।অনেককিছু গোছাতে হবে।
:-আচ্ছা।
ফেসবুক থেকে বের হয়ে এলাম।কাল আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে।আমি দোলাকে কাল সামনাসামনি দেখবো এটা ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগা মনের ঢেও খেলে গেলো।কেমন হবে দোলা?খুব সুন্দরী নাকি কালো,নাকি মোটা!এসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেলো।বাসায় বলেছি আমার এক ফ্রেন্ডের বোনের বিয়ে।সেখানেই রাত থাকবো।পরেরদিন বাসায় ফিরবো।আব্বু আম্মু না করেনি।কারণ তারা আমাকে বিশ্বাস করে।
বিকেলবেলা রওনা হলাম।অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে মনের মধ্যে।দোলার জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।জানিনা ওর পছন্দ হবে কিনা।
পরেরদিন সকাল ৯টা।
আমি একটু আগেই চলে এসেছি।আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডকেও নিয়ে এসেছি।দোলা এখনো আসেনি।অনেক টেনশন হচ্ছে।দোলা কী আমাকে দেখে পছন্দ করবে, যদি ওর পছন্দ নাহয় তখন কী হবে?ধ্যাত কীসব ভাবছি।দোলা নিশ্চয় আমাকে পছন্দ করবে।কারণ ভালোবাসা হয় মন দেখে চেহারা বা সৌন্দর্য দেখে নয়।
ফোনের শব্দে চমকে ওঠলাম।মানুষ যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে তখন হালকা শব্দেও চমকে ওঠে সে।
দোলা কল দিয়েছে
:-কই তুমি?(দোলা)
:-আমি রেষ্টুরেন্টের পাশের দিকটায় আছি।তুমি কই?(আমি)
:-তুমি ওখানে থাকো আমি আসছি।
:-ওকে।
দোলা আসছে।আমার হার্টবিট বাড়ছে।মনের মধ্যে একপ্রকার ভয়ও কাজ করছে।
:-তুমি হুসাইন?
পিছন থেকে কেউ একজন কথাটা বলে ওঠলো।আমি পিছন ফিরে তাকালাম।আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো শাড়ি পড়া একটা মেয়ে।হালকা গায়ের গড়ন।আহামরি সুন্দরী না হলেও একধরণের মায়া লেগে আছে মেয়েটার চোখে মুখে।
:-কীহলো কথা বলোনা কেনো?(দোলা)
:-আমিই হুসাইন(আমি)
:-এই তুমি এত চিকন কেনো?বাসায় কী তোমার আম্মু খেতে দেয়না।
দোলার কথা শুনে আমি অবাক হলাম।প্রথম দেখাতে কোনো মেয়ে এভাবে কথা বলে আমার জানা ছিলোনা।
:-পরিচয় করিয়ে দিই।এহলো আমার ফ্রেন্ড সুমন।সুমন এ হলো দোলা,যার কথা তোকে বলেছিলাম।(আমি)
:-হাই ভাইয়া কেমন আছেন?(দোলা)
:-হ্যা ভালো।তুমি?(সুমন)
:-ভালো।চলুন কোথাও বসি।
:-চলো।(আমি)
আমরা একটা রেষ্টুরেন্টে এসে বসলাম।দোলা আমার পাশের চেয়ারটাতে বসেছে।আমি বারবার আড়চোখে দোলাকে দেখছি।খুব ভালো লাগছে ওকে দেখে।
:-কী খাবে বলো?(দোলা)
:-তোমার যা খুশি।(আমি)
দোলা ৩টা কফির অর্ডার করলো।আমি ব্যাগে থাকা শাড়ির প্যাকেট বের করে দোলার হাতে দিলাম।
:-কী আছে এর মধ্যে?(দোলা)
:-বাসায় গিয়ে খুলে দেখো।(আমি)
:-আচ্ছা।
সারাদিন দোলার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরলাম।অনেক মজা করলাম সবাই মিলে।বিকেলবেলা দোলা চলে গেলো ওর বাসায় আর আমি চলে এলাম সুমনের বাসায়।সেদিন সন্ধায় রওনা দিলাম বাসার পথে।
বাসায় আসতে আসতে রাত ২টা বেজে গেলো।আমি বাসায় আসা পর্যন্ত দোলা কম করে হলেও ৫০ বার ফোন করেছে।মেয়েটা সত্যিই আমাকে খুব ভালোবাসে।
সামনাসামনি দেখা হবার পর আমাদের মাঝে ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো।
দেখার হবার কয়েকদিন পরের ঘটনা।
আমি ফেসবুকে দোলার সাথে কথা বলছি এমন সময় একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসলো সাথে একটা মেসেজ।আইডির নাম রনি মাহমুদ।মেসেজটা ছিলো এমন
:-ভাইয়া আপনার সাথে কথা আছে।প্লিজ রিকোয়েস্টটা এপছেট করবেন।
যেহেতু ছেলেটা কথা বলতে চাই তাই রিকোয়েস্ট এপছেট করলাম।
:-জ্বি বলুন কী বলবেন।(আমি)
:-জানিনা আপনি কথাগুলো কিভাবে নিবেন তবুও বলছি।আপনি দোলাকে কিভাবে চেনেন?(রনি)
:-কোন দোলা?
:-যার সাথে কয়েকদিন আগে ঢাকাতে দেখা করলেন।
:-আমি দোলার সাথে দেখা করেছি আপনি জানলেন কিভাবে?
:-আমি সবই জানি।
:-আপনি কিভাবে জানেন এতকিছু?
:-সে অনেক লম্বা কাহিনী।
:-বলুন আমি শুনবো।
:-দোলার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়।আমার পছন্দের কেউ ছিলোনা তাই বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করি।কিন্তু বাসর রাতে দোলার কাছ থেকে জানতে পারি বিয়েটা ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।ও আরো পড়াশুনা করতে চাই।আমি দোলাকে বলি "আমি তোমার পড়ালেখা করাবো"ও অনেক খুশি হয়েছিলো।আমি যেখানে চাকরী করতাম সেখান থেকে বাসা অনেকদুরে ছিলো বিধায় বাবা মাকে দেখাশুনার জন্য দোলাকে বাসায় রেখে যায়।আমি আগে থেকেই অফিসের পাশে বাসা নিয়ে থাকতাম।প্রতি সপ্তাহে ২দিন বাসায় এসে থাকতাম।দোলাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিই।দোলা পরিবারের সবার অনেক যত্ন নিতো।মাস চারেক ভালোই চলছিলো সবকিছু হঠাৎ করে দোলা পাল্টে যায়।আমার বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।এক পর্যায়ে ও ওর বাপের বাড়ি চলে যায়।ওর পরিবারের লোকজনকে বলে আমি নাকি ওর উপর অনেক নির্যাতন করি।ওর পরিবারের লোকেরা ডিভোর্স পেপার দিয়ে দেয়।কিন্তু আমি এখনো সই করিনি তাই এখনো ডিভোর্স হয়নি আমাদের। আমি দোলার সব খোজখবর রাখি।আমার বিশ্বাস ছিলো দোলা ফিরে আসবে।আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি ওকে।কিন্তু কয়েকদিন আগে আমার এক ফ্রেন্ডের থেকে জানতে পারি ও আপনার সাথে রিকেশন করেছে।
এতটুকু বলেই থামলো লোকটি।
:-কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন?
:-হ্যা পারবো।আমি আমাদের কাবিনের পিক তুলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে ভেসে ওঠলো গোটা দশেক পিক।রনির সাথে বিয়ের সময় তোলা পিক।কাবিনের পিক।সবকিছু আমি দেখলাম।সবকিছু দেখার পরেও কেনো জানি আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি আমি।
:-ভাইয়া দেখেছেন?
আমি কী উওর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা।দোলা এমন একটা কাজ আমার সাথে করবে বিশ্বাসই হচ্ছেনা।এসব ভাবতে ভাবতে দোলার নম্বর থেকে ফোন আসলো।
:-হ্যালো বাবু কী করো?(দোলা)
:-এইতো বসে আছি।তুমি?(আমি)
:-আমিও।খেয়েছো এখন?
:-রনিকে চেনো তুমি?
:-কোন রনি?
:-আগে যার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছিলো।
:-আমি কোনো রনি টনিকে চিনিনা।আর আমার বিয়েও হয়নি।
:-আল্লাহর নাম নিয়ে বলো তুমি রনিকে চেনোনা?
দোলা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলো।আমি চুপ থাকতে দেখে বললাম
:-রনি তোমাকে খুব ভালোবাসে।ওর কাছে ফিরে যাও।
:-সম্ভব না।ওই লোকটাকে আমি সহ্য করতে পারিনা।তাছাড়া এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
:-তোমাদের ডিভোর্স হয়নি এখনো। আমার সাথে তোমার রিলেশন থাকাটা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।এটাকে পরকিয়া প্রেম বলে।আমি পারবোনা এসব আর করতে।
:-প্লিজ এমনটা বলোনা।আমি তোমাকে ছাড়া মরে যাবো।
:-আর তোমাকে ছাড়া রনি মরে যাবে।
আমি অনেক বুঝালাম দোলাকে।রনির কাছে ফিরে যাবার জব্য বললাম।জানিনা ও কতটুকু বুঝলো তবে বললো ভেবে দেখবে।আমি চাইনা আমার জন্য কারো ঘর ভাঙ্গুক।অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি কিন্তু দোলাকে যে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে রনি।
সেদিন আর কথা হয়নি দোলার সাথে।আমিও ফোন দিইনি।অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি।এই রিলেশন যদি আমি চালিয়ে যেতাম তাহলে আমি পরোকাল হারাতাম।অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও মেনে নিয়েছি সবকিছু।দোলাকে আমি আমার নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।আমি চাইলে পারতাম দোলাকে নিজের রাখতে কিন্তু রাখিনি।কারণ পরোকিয়া প্রেমের শাস্তি খুব বেশি হবে পরোকালে।দোলার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছে।ফোনের শব্দে বাস্তবে ফিরলাম।দোলা ফোন দিয়েছে।রিচিভ করার ইচ্ছা না থাকলেও রিচিভ করলাম
:-ভাইয়া কেমন আছেন?আমি রনি(রনি)
:-ভালো।আপনি?(আমি)
:-ভালো।ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে।
:-বুঝলাম না।
:-দোলা ফিরে এসেছে।
:-ভালো।
:-নিন দোলার সাথে কথা বলুন।
:-হ্যালো(দোলা)
:-বলো।(আমি)
:-আমাকে ক্ষমা করে দিও।আর নিজের ক্ষতি করোনা।সবকিছু ঠিকঠাক মত করো।
:-হুম করবো।
:-সত্যিতো?
:-তোমাদের বাসায় একদিন দাওয়াত করবেনা আমাকে?
:-হ্যা করবোতো।তোমার যেদিন ইচ্ছা চলে আসো।
:-আচ্ছা একদিন সময় করে আসবো।এখন আমার কাজ আছে রাখছি।
ওপাশ থেকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।দোলার সাথে কথা বলতে গিয়ে গলাটা শুকিয়ে আসছিলো।কষ্টগুলো বেড়ে যাচ্ছে।ফোন থেকে সিমটা বের করে ভেঙ্গে ফেললাম।ফেসবুক আইডিটা নষ্ট করে দিলাম।দোলার সব পিকও ডিলেট করে দিলাম।সবকিছু ডিলেট করলেও মন থেকে কিভাবে ডিলেট করবো।মনের মধ্যে যে ছবি এঁকেছি সেটা কিভাবে ডিলেট করবো।বুক ফেটে কান্না আসছে আজ।ভালোবাসায় এতটা কষ্ট জানা ছিলোনা।দোলার স্মৃতিগুলো সারাজীবন আমাকে কাঁদাবে সেটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি।
-
-চলবে
-পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।পরের পর্বই সমাপ্তি পর্ব হবে।web service design in bangladeshbd
No comments:
Post a Comment